মানুষ গুজব ছড়িয়ে আনন্দ অনুভব করে। মজা পায়, মজা নেয়। অন্যকে বিপদে ফেলার অপচেষ্টা করে দিনশেষে ব্যর্থই হয়। ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে এর। কিন্তু ওই যে যারা অস্থায়ী আনন্দ অনুভব করে, তারা আসলে কোন প্রজাতির প্রাণী ?
একজন মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলেন ঢাকাকে নিয়ে। সবুজে সবুজে ভরে উঠবে ঢাকা। শিশুদের জন্য বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তুলবেন। যানজট নিরসনে হাতে নিয়েছিলেন চমৎকার উদ্যোগ। দখল হয়ে যাওয়া বাসস্ট্যান্ডগুলো উদ্ধার করবেন। রাস্তার পাশে পার্কিং করার কারণে যে যানজটের সৃষ্টি হয় তা ঠেকাবেন কঠোর হাতে। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। বর্তমানে লন্ডনে চিকিৎসাধীন।
সম্প্রতি তাঁর স্ত্রী রুবানা হক ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করেছেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমেরিকা থেকে ফেরার সময় কয়েকদিন লন্ডনে অবস্থান করেন। তখন রুবানা হক প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। এ সময় রুবানা হকের মেয়ে ওয়ামিকের নবজাতককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরম মমতায় কোলে নেন।
প্রধানমন্ত্রীর সেই কোলে নেয়া ছবিটাই শেয়ার করেছেন রুবানা হক। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আমাদের নাতি লেইথ, আপার কোলে। আমি সাধারণত ছবি পোস্ট করি না। কিন্তু এই ছবিটি শেয়ার করতে হল। কারণ আনিসকে নিয়ে গুজব বেড়েই চলেছে। ‘মিথ্যা খবর’ প্রচার করে কেউ কেউ ফায়দা লুটছে, যা খুবই দুঃখজনক। ছবিটা এ জন্যই দিতে হল, যেন সবাই জানে যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের প্রতি আগের চেয়ে এখন আরও বেশি সহানুভূতিশীল। তিনি আমাদের পরিবারকে লন্ডনে সাক্ষাৎ দিয়েছেন এবং যখন কয়েকদিন আগে ঢাকায় এসেছিলাম তখনও তিনি আমাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিয়েছেন এবং আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করেছি। আমাদের দুঃসময়ে তিনি যে অসাধারণ সহমর্মিতা নিয়ে আমাদের পাশে আছেন, তার জন্য আমি ও আমার পরিবার তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ ও চিরঋণী।
ছবিটি সব গুজবকে নস্যাৎ করে দেবে, এই আমার আশা। আপনারা সবাই আমার স্বামী আনিসুল হকের জন্য দোয়া করুন।’
নিচে রুবানা হকের লেখাটি তুলে দেয়া হল-
‘Laith, our grandson, in Apa’s lap. I am generally shy about posting pictures but I have to share this one, while rumours about Annis continue to brew. It is extremely unfortunate that some quarters gain from spreading “fake news”. Just to assure everyone that HPM, Sheikh Hasina couldn’t have been kinder to us. Not only did she meet with us in London, I personally met her a few days ago when I was in Dhaka. Our family continues to be extremely grateful and indebted to her for the extra ordinary support she has offered during our times of distress.
I hope this picture will kill the rumors and I hope that all of you will continue praying for my husband, Annis.’
গুজববাজরা লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে হোটেলের বাইরে গিয়ে কারো সঙ্গে দেখা করেন নি। খুব ভাল কথা এবং সত্যি কথা। রুবানা হকও এই সত্য থেকে সরেন নি। তিনি লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে আমাদের পরিবারকে সাক্ষাৎ দিয়েছেন। রুবানা হক কিন্তু লেখেননি প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাসায় গিয়ে দেখা করেছেন।
এখন গুজববাজরা met শব্দের মানে(এখন meet’র অতীতকাল) নিয়ে খেলতে চেয়েছেন হয়ত। met মানে সাক্ষাত করেছেনও হতে পারে আবার সাক্ষাত দিয়েছেনও হতে পারে। যেহেতু রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, তাই তিনি কখনো সাক্ষাত করেন না, তিনি সাক্ষাত দেন। এটা হয়ত ওই গুজববাজরা অজ্ঞতার কারণে বা নিজেদের ধান্দাটা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ‘সাক্ষাত করেছেন’ ব্যবহার করে খেমটা নেচেছেন।
আমরা জানি এমন অনেক ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টাল আছে, যে চালায় সেই সম্পাদক, কম্পোজিটর, প্রুফ রিডার। তিনি ফোন করে মানুষকে বলে বেড়ায় অমুক অনলাইনে এই সংবাদ বের হয়েছে। কারণ ওইসব অনলাইনের খবর কেউ রাখে না। আর এসব অনলাইনের মালিকদের অতীত ঘাঁটাঘাটি করলে দেখা যাবে, তারা বরাবরই এগুলো করেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। মিডিয়াকে ব্যবহার করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করার অন্তরালে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতারণা করেছেন, নয়ত হুমকি-ধামকি দিয়ে অর্থকরী আদায় করেছেন। অতীতে এরা এই করেছেন, এখনও তা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গুজববাজদের সংবাদে লেখা হয়, ওই ছবিসহ লেখাটি প্রকাশের পর নাকি রুবানা হকের অমন দাবির জন্য অনেকেই এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রশ্ন হল? এই অনেকেরা কারা? এই অনেকে’র নাম উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করলে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ত। নাকি বাতাসে কথা ছেড়ে দেয়াই এসব সংবাদ ও নিউজ পোর্টালের উদ্দেশ্য? এই অনেকের অস্তিত্ব কি বাস্তবে, নাকি এসব অপসংবাদ নির্মাতার মাথায়? এখানে হলুদ সাংবাদিকতার গন্ধ টের পাওয়া যাচ্ছে। আবার লেখা হয়েছে, ওই পোস্টে নাকি অর্ধসত্য বলা হয়েছে। কে বলে অর্ধসত্যের কথা? যারা হলুদ সাংবাদিকতায় সিদ্ধহস্ত তাদের মুখে রাম নাম, বড়ই হাস্যকর।
আসুন গুজব বন্ধ করি। গুজব চালিয়ে সারাজীবন কারো লেজুড়বৃত্তি করাই সম্ভব। নিজেকে সাধারণ মানুষের সামনে হাজির করানো সম্ভব না। পর্দার আড়ালে থেকে টু-পাইস কামানো সম্ভব। বড় সাংবাদিক হওয়া যায় না তাতে।
একজন নাগরিকবান্ধব মানুষ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, একজন সফল ব্যবসায়ী সম্পর্কে কিছু লেখার আগে ১০ বার নিজের সাথে নিজে কথা বলে তারপর লিখুন। তারপর গুজব ছড়ানোর ঠিকাদারিটা নেন। দেশের সাধারণ মানুষ যাঁর জন্য দোয়া কামনা করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে এই অসহায় পরিবারের ওপর সহানুভূতিশীল হয়ে সহমর্মিতা দেখিয়েছেন, সেখানে কতিপয় গুজববাজদের এই অতি উৎসাহ আমাদের হতাশ করে না, বরং সত্যের দিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে।
সত্য দিনের আলোর মত ঝকঝকে। শত গুজব সরিয়ে দিয়ে বের হবেই। দেশবাসী আসুন, দোয়া করি, মেয়র আনিসুল হক দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক। এই ঢাকার উন্নয়নের জন্য তাঁকে খুব প্রয়োজন।