ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, আনিসুল হক ছিলেন সৎ, যোগ্য ও গতিশীল নেতৃত্বের প্রতীক। তিনি যেটি অঙ্গীকার করতেন, সব বাধা উপেক্ষা করে সেটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতেন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আপসহীন, নির্ভীক ও সৃজনশীল। ঢাকা উত্তর ও ব্যবসায়ী সমাজের উন্নয়নে তার অবদান ঢাকাবাসী চিরকাল মনে রাখবে। গতকাল বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআই আয়োজিত এই স্মরণসভায় ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে এই সভা ও মিলাদ মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
বক্তারা বলেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএ ও সার্ক চেম্বার
অব কমার্সসহ বিভিন্ন সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি তার মেধা-মনন ও সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন, যা তাকে মানুষের হৃদয়ে বাঁচিয়ে রাখবে অনন্তকাল।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সবার হৃদয়ে আছেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তিনি যেটুকু দায়িত্ব নিতেন, সেটা করতেন। তিনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন। দেশের জন্য এমন অনেক কিছু করেছেন, যা এ দেশে করা সহজ ছিল না। মাত্র আড়াই বছরে ঢাকা সিটিতে বহু পরিবর্তন এনেছেন। চলে যাওয়ার এক বছর পরেই তার অনুপস্থিতি চোখে পড়ছে। তার এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির বলেন, আনিসুল হককে নিয়ে নানা কাজে দিন-রাত ছুটে বেড়িয়েছেন। তার মধ্যে ভালো মানুষের প্রতিচ্ছবি দেখেছেন। তিনি কিছু করার অঙ্গীকার করলে তা বাস্তবায়ন করতেন। ফেডারেশনের জরাজীর্ণ অবস্থা দূর করেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জঞ্জাল সাফ করে গেছেন। এখন ময়লামুক্ত ঢাকা উত্তর সিটি। আগামীর জন্য সুন্দর ঢাকা গড়তে দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে গেছেন তিনি।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ স্মৃতিচারণ করে বলেন, আনিসুল হক চিন্তা করেছিলেন, এফবিসিসিআইতে তার স্থানে আমি যেন দায়িত্ব গ্রহণ করি। তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে যেতে পারি। আনিসুল হকের আগে কেউ স্বপ্ন দেখেননি, সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফেডারেশনের উন্নয়ন করা সম্ভব। তিনি দুই কিস্তিতে সরকারের কাছ থেকে ৪০ কোটি টাকা নিয়ে ফেডারেশনের উন্নয়ন করেছেন। এই ধারাবাহিকতায় আমিও ৪০ কোটি টাকা এনেছি। তিনি বলেন, সারাদেশের চেম্বারের জমি কিনে ভবন করার ব্যবস্থা করে গেছেন আনিসুল হক। তিনি দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের জন্য অনেক কাজ করেছেন। এ. কে. আজাদ বলেন, ফেডারেশন ব্যবসায়ীদের আস্থার জায়গা। এই সংগঠন যত শক্তিশালী হবে, ব্যবসায়ীরা তত শক্তিশালী হবে। এ জন্য বর্তমান পর্ষদকে সাবেক নেতাদের নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা ছিল আনিসুল হককে দিয়ে ঢাকা সিটি সাজাবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন। তিলোত্তমা ঢাকা সিটি গড়তে কাজ করেছেন। তিনি ভাবতেন, সারাদেশের উন্নয়নের আগে ঢাকা সিটির উন্নয়ন করতে হবে। এই উন্নয়নের রূপরেখা দিয়ে গেছেন তিনি। এখন বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, আনিসুল হক ফেডারেশনের ভবন করার জন্য জমি কিনে রেখে গেছেন।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, আনিসুল হক না করলে তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড খালি হতো না। সৃষ্টিশীলতা ও উদ্ভাবনী দক্ষতা ছিল তার। ঢাকা সিটির বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন সড়ক করেছেন। তিনি উন্নয়নের রূপরেখা দিয়ে গেছেন। এখন তা বাস্তবায়ন করতে হবে। যদিও এ কাজ করা খুবই কঠিন, তবু আমাদের তা করতে হবে।
আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক বলেন, আনিসুল হক আজ আমাদের মাঝে নেই, তবে তিনি হারিয়ে যাননি। তিনি আমাদের মধ্যেই বেঁচে আছেন। সবাইকে ভালো কাজ করার জন্য একটি পথ দেখিয়ে গেছেন তিনি।
আনিসুল হকের ভাই ও সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক বলেন, তিনি আমাদের অভিভাবক ছিলেন। তিনি সবার পাশে সব সময় এগিয়ে যেতেন। আমি তার সব বিষয়ই জানতাম, এমন ধারণা ছিল। কিন্তু মৃত্যুর পর বিভিন্নজনের কাছ থেকে তার অনেক অজানা বিষয় জেনেছি। তার ভালো কাজগুলো সবার মধ্যে প্রেরণা জোগাবে।
এফবিসিসিআইর উন্নয়ন এবং দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখায় সংগঠনের নতুন ভবনের অডিটরিয়াম আনিসুল হক নামকরণের আহ্বান জানান ব্যবসায়ী নেতারা। সভায় এফবিসিসিআইর সহসভাপতি মো. মুনতাকিম আশরাফ, সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাবেক সহসভাপতি দেওয়ান সুলতান, সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক পরিচালকসহ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় আনিসুল হকের স্ত্রী-সন্তান, ভাইবোনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য অংশ নেন। এফবিসিসিআই অধিভুক্ত সদস্য সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।