রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবহেলার কারণে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলেছেন, রাজউক সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে আজ ঢাকা শহরের এমন অবস্থা হতো না। এ সময় রাজউক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন ভূঁইয়া এবং গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। তারা রাজউকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ স্বীকারও করে নেন।
গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) আয়োজিত ‘আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন দৃশ্য দেখেন উপস্থিত সুধীরা। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, শুরু থেকেই ঢাকা শহরের পরিকল্পনা সঠিক নিয়মে হয়নি। এ জন্য এখন নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে। কেননা, সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনা করা হলে তেজগাঁও এলাকাকে কোনোভাবেই শিল্প এলাকা করা হতো না। তিনি নগরীর বিদ্যমান অব্যবস্থাপনাগুলো দুই মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করবেন বলে জানান। এ সময় তিনি সব ভবনের পার্কিংয়ের স্থানকে পার্কিংয়ের
কাজে ব্যবহারের নির্দেশ দেন।
সূচনা বক্তব্যে মেয়র আনিসুল হক বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আবাসিক এলাকায় অনুমোদনহীনভাবে ছয় হাজার ৫৯টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে আবাসিক এলাকায় যানজটসহ বসবাসের উপযোগিতা চরমভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে ডিএনসিসি এলাকায় রয়েছে পাঁচ হাজার ৩৪১টি ও ডিএসসিসি এলাকায় রয়েছে ৭১৫টি। রাজউকের তদারকি থাকলে কোনোভাবেই এসব ভবন গড়ে তোলা সম্ভব হতো না। রাজউকের ব্যর্থতা বা রাজউকের কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার কারণে আবাসিক এলাকার এমন বিপর্যয় ঘটেছে। এ সময় তিনি বলেন, ‘বেড়ায় ক্ষেত খেলে রক্ষা করবে কে?’
মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, অপরিকল্পিতভাবে শহর গড়ে ওঠায় আজ বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান হয়েছে ঢাকা। এ সময় ঢাকার যানজট, পানিনিষ্কাশন, পয়োনিষ্কাশন, রাজউকের পরিকল্পনার ত্রুটি উল্লেখ করে কঠোর সমালোচনা করেন মেয়র। তিনি আরও বলেন, গুলশান-বনানীর মতো ধানমণ্ডি ও খিলগাঁও আবাসিক এলাকায় বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
ডিএসসিসির মেয়র ধানমণ্ডি এলাকার আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক অফিস উঠিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, লাগামহীনভাবে ঢাকা শহরের কার্যক্রম আর চলতে দেওয়া হবে না।
রাজউক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন ভূঁইয়া বলেন, অনেক আগে থেকে রাজউকের দায়িত্বে অবহেলার কারণে অনেক অনিয়ম হয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে এসব অনিয়মের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তিনি বলেন, নগরীর বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এসব ব্যাপারে রাজউকে শতভাগ স্বচ্ছতা এবং সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, আমি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বিশ্বাস করি না। যে কোনো সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তিনি রাজউককে ভেঙে উন্নয়ন ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কাজের জন্য দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ দুই সিটি করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।