দেশে যদি সরকার থেকেই থাকে তবে সেই সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ বা জনপ্রতিনিধিরা কি চান সরকারি জায়গা দখল করে দুষ্টচক্র অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করুক। তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা দখল করে আবার ট্রাকস্ট্যান্ড গড়ে উঠুক। ঢাকা শহরের যেসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল তা আবার দখল হয়ে যাক ?
যদি তাই-ই না চান তবে কেন আবার দখল হয়ে যাচ্ছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের নেতৃত্বে উচ্ছেদ হওয়া জায়গাগুলি। কেন ঢাকার বিভিন্ন আসনের সাংসদরা তাদের এলাকার উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় আবার দখল হয়ে যাচ্ছে, নীরবে দেখে যাচ্ছেন। তার মানে কি তাদের ইচ্ছে ছিল না ওই জায়গাগুলো মেয়র আনিসুল হক উচ্ছেদ করুক?
যে মহাখালী বাসষ্ট্যান্ড ও এর আশপাশের এলাকায় বড় বড় বাস এলোমেলো করে রেখে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করা হত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে সঙ্গে নিয়ে মেয়র আনিসুল হক ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সেই অবস্থাকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন। এখন আবার তা আগের মত হয়ে গেছে। তার মানে দাঁড়ায়, মেয়র আনিসুল হকের অনুপস্থিতে ওই বিশৃঙ্খলা দেখার মত কোনো জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীসভায় নেই। জনগনের মনে তো সে রকম ভাবনা আসতেই পারে।
যে মানুষটি ঢাকার চেহারা পাল্টে দেবে কাজের মাধ্যমে, এ রকম স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়েছিলেন। তিনি আজ অসুস্থ হয়ে লন্ডনে চিকিৎসাধীন। তার অবর্তমানে আবার সব উচ্ছেদ হওয়া অবৈধ জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। আর সরকারের মন্ত্রী ও সাংসদরা চেয়ে চেয়ে দেখছে। আবার কেউ কেউ পত্রিকার পাতায় সেই খবর প্রকাশিত হতে দেখার পরেও কোনো প্রকার উদ্যোগ নিচ্ছেন না, এতে করে কি বোঝা যায়? বোঝা যায় মেয়র আনিসুল হক যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আওয়ামী লীগ সরকারের পছন্দ ছিল না। বা দখলবাজদের সঙ্গে সরকারের কোনো প্রভাবশালী নেতার যোগাযোগ থাকায় এখন কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না।
মেয়র আনিসুল হকের অবর্তমানে তিন সদস্যের প্যানেল মেয়র নিয়োগ দেওয়া হলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে তেমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। মেয়র আনিসুল হক সুস্থ থাকাকালীন সময়ে যে কাজগুলো শুরু হয়েছিল তার বেশির ভাগ কাজই থেমে আছে। এর ফলে নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। অনেক রাস্তার কাজ অর্ধেক হয়ে আছে। গর্ত আর খোড়াখুড়ির জন্য বৃষ্টি হলে কাদা পানিতে একাকার হয়ে যায়। অনেক ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ অল্প একটু হয়ে পড়ে আছে। যার ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নগরবাসী।
এমন অভিযোগও শোনা যায়, মেয়র আনিসুল হকের কঠোর হুশিয়ারির কারণে অর্থাৎ কাজে কোনো গাফিলতি হলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন কথায় অনেক দুষ্টচক্র নিজেরাও কাজে এগিয়ে আসে নি, অন্য যারা সঠিকভাবে কাজটি করবে তাদেরকেও আসতে দেয়নি। তারা যাতে কাজটি না করে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ঢাকা উত্তরের অনেক এলাকায় বিশেষ করে মিরপুর মোহাম্মদপুরের উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে আছে।
দেখা যায় অনেক রাস্তার কাজের জন্য ইট বালু সুরকি এনে রাখা হয়েছে প্রায় বছরখানেক আগে। এখনও ওইভাবেই পড়ে আছে। বৃষ্টির ফলে বালু পানির সাথে মিশে ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দিয়েছে। যার ফলে একটু ভারি বৃষ্টির ফলে মিরপুরের অনেক এলাকার রাস্তাঘাট হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট।
আমরা এ থেকে কি বুঝতে পারি? বর্তমান সরকারের নজরে নেই ঢাকার উন্নয়ন। তবে কি আমরা ধরে নেব, মেয়র আনিসুল হক সুস্থ হয়ে ফেরা না পর্যন্ত নগরবাসীর দুর্ভোগ কমবে না। ঢাকার উন্নয়নের দায়িত্ব কি শুধু মেয়র আনিসুল হকের? তিনি কি এই সরকারের অংশ নন?
একজন মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলেন ঢাকাকে নিয়ে। সবুজে সবুজে ভরে উঠবে ঢাকা। শিশুদের জন্য বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তুলবেন। যানজট নিরসনে হাতে নিয়েছিলেন চমৎকার উদ্যোগ। দখল হয়ে যাওয়া বাসষ্ট্যান্ডগুলো উদ্ধার করবেন। রাস্তার পাশে পার্কিং করার কারণে যে যানজটের সৃষ্টি হয় তা ঠেকাবেন কঠোর হস্তে। কিন্তু অসুস্থ হয়ে লন্ডনে চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁর সেই স্বপ্ন নগরবাসীর স্বপ্নেই থেকে গেল।
তাঁর সেই স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় তাঁর সুস্থ হয়ে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে নগরবাসীকে। তা হলে তো ধরে নিতেই হবে দেশে কোনো সরকার নেই। কিংবা মেয়র আনিসুল হকের অনেক পরিকল্পনার সঙ্গে ঢাকার জনপ্রতিনিধিরা একমত ছিলেন না। আর এই একমত না থাকার কারণে আজ ঢাকার অনেক কিছুই আবার দখলে চলে যাচ্ছে দুষ্টচক্রের।