৬৭ বছর ধরে পরিবহন মালিকদের দখলে থাকা সাতরাস্তা থেকে কারওয়ান বাজার রেলগেইট পর্যন্ত তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডটি মাত্র দুই দিনে দখলমুক্ত করেছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। এটি সম্ভব হয়েছে তার কৌশল ও সহজ সমন্বয়ের ফলে।
রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্মরণ সভায় এ কথা জানান বাংলাদেশ ট্রাক-ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তুম আলী খান।
আনিসুল হকের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, গত ৬৭ বছর ধরে তেজগাঁ ট্রাকস্ট্যান্ডসংলগ্ন সাতরাস্তা থেকে কারওয়ান বাজার রেলগেট পর্যন্ত-এই সড়কটি ট্রাক-ভ্যান মালিকরা ব্যবহার করে আসছিল। যদিও এটি সরকারি রাস্তা।
তিনি বলেন, ‘আনিসুল হক মেয়র হওয়ার পর আমাকে ডেকে নিলেন তার অফিসে। বললেন, আপনারা যে সড়কটি ট্রাক-ভ্যান রেখে বন্ধ করে দিয়েছেন এতে জনগণের চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। এই সড়কটি ছেড়ে দিতে হবে। তার কথায় যুক্তি থাকায় আমি বেশি কিছু বলতে পারিনি। যদিও ওই সময় মালিক-শ্রমিকদের সাথে সিটি কর্পোরেশনের কিছুটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল।
তবে শান্তনার বিষয় হলো দীর্ঘ ৬৭ বছর ধরে কেউ এই সড়কটি দখলমুক্ত করতে না পারলেও এই অসাধ্য কাজটি মাত্র দুই দিনেই দখলমুক্ত করে গেছেন মেয়র আনিসুল হক। তিনি কৌশলে ও সহজ সমন্বয়ের মাধ্যমে এর সমাধান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’
স্মরণ সভায় বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, আনিসুল হক ছিলেন অসাধারণ। তিনি সব ক্ষেত্রে এর দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।
তিনি বলেন, আনিসুল হক দুইটা বড় কাজ করে গেছেন তিনি পরবর্তী সময়ের মেয়রের জন্য।
এক. প্রায় সব সেক্টরে সবার সাথে যোগাযোগ করে দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে গেছেন।
দুই. চিহ্নিত ওই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য পরবর্তী সময়ের মেয়রের উপর দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তবে এগুলো সমাধান করা কিছুটা কঠিনই হবে।
আনিসুল হকের ব্যক্তি জীবন স্মরণ করে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আনিসুল হক ছিলেন, বিনয়ী, নম্র, সাহসী মানুষ। আমাকে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন করার পেছনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তিনি।
শফিউল ইসলাম বলেন, আনিসুল হক শত্রুর সাথেও হেসে হেসে কথা বলতেন। সহজে আপস করতে পারতেন সবকিছু। তিনি আজ না থাকলেও তার কর্ম আমাদের মাঝে রয়েছে। এগুলোতে আমরা তাঁকে খুজে পাই।
বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আনিসুল যা করতে চেয়েছেন তা করে সফল হয়েছেন। পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও তিনি আমাদের মাঝে আছেন, থাকবেন। তার পরিবার যেন ভালভাবে বাকি জীবন কাটাতে পারে সেই দোয়া করি।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা বলেন, আনিসুল যেভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনোক নতুন কিছু পেত।
আনিসুল হকের ছোট ভাই ও সাবেক সেনাপ্রধান শফিউল হক বলেন, সবার কাছে দোয়া চাই তিনি (আনিসুল হক) যেন জান্নাতবাসী হন। তার উদ্যোগগুলো যেন আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি এবং তার স্মৃতিগুলো যেন ধরে রাখতে পারি সেই প্রত্যাশা করি।
অনুষ্ঠানে শুরু থেকেই ভারাক্রান্ত ছিলেন আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক। তিনি বলেন, স্মৃতিচারণ আসলেই খুব কষ্টের। ব্যবসায়ী হলেই চালাক হতে হবে এমন নয়। আনিসুল ছিলেন সহজ নম্র ধরনের ব্যবসায়ী। তিনি কখনও কারো বদনাম করেননি।
অনুষ্ঠানে আরো স্মৃতিচারণ করে আরো বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বিজিএমইএর কয়েকজন সাবেক সভাপতি, আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হক প্রমুখ।
স্মরণ সভা শেষে আনিসুল হকের জন্য দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।